গল্পটা শহর থেকে বেশ দূরের এক গ্রামের, যেখানে ভরা মৌসুমে বিলের উপর খেলা করে সাদা বক। ছোট ছোট নৌকা গোলাপী-সাদা শাপলার ভিড় সরিয়ে ছুটে চলে এদিক-ওদিক। বিলের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, পানির দিকে তাকালে মনে হবে আকাশে ভেসে বেড়ানো পেঁজা তুলোর মতো মেঘগুলো বিলের পানিতেই থরে থরে সাজানো আছে। মলিন অন্ধকার গায়ে জড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামে— তার আগেই বাড়ি ফিরে আসে শালিক, ময়নার দল। অন্ধকার আরও গাঢ় হলে জোনাকিরা উড়ে চলে বিলের পাড় ঘেঁষে, ঝোপঝাড়ের উপর দিয়ে। সুন্দর এই গ্রামে, বিলকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকে সমির উদ্দীন মাঝি। স্ত্রী জোছনাকে সে ডাকে বিলের রাণী বলে, নিজেকে ডাকে বিলের রাজা। গল্পটা কি তাদের? ছবির মতো সুন্দর সে গ্রামে হঠাৎ করেই নেমে আসে বিপদের কালো মেঘ। শুরু হয় প্রবল ঝড়। গ্রাম্য রাজনীতির কবলে লণ্ডভণ্ড হয় সাধারণ মানুষের সাজানো গোছানো জীবন। গড়ে ওঠা সুন্দর সম্পর্কের মাঝে তৈরী হয় ভাঙন— বাড়ে জনম জনমের দূরত্ব, অপেক্ষা। রাতুল-রূপার কৈশরের বন্ধুত্ব, আবেগ ছাপিয়ে গল্পে হঠাৎ করেই প্রাধান্য পায় গ্রাম্য বংশীয় দ্বন্দ্ব। গ্রামের চেয়ারম্যান রুস্তম খানের চতুরতার কাছে হার মানে শিকদার বংশের ছেলে বাবু শিকদার। চেয়ারম্যানের সব সাজানো নকশা বুঝেও যায় সে। প্রতিশোধের তীব্র আগুন জ্বলে উঠে তার ভেতর। ‘বাবু শিকদাররে চিনতেই পারলানা চেয়ারম্যান’, হাসতে হাসতে দীঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে গল্প বদলানোর নকশা সাজাতে থাকে বাবু শিকদার। তারপর কি গল্প বদলায়? হঠাৎই শহরের ব্যস্ত অলিগলি উঁকি দেয় গ্রামীণ গল্পে। তারপর আবারও, বাঁক নেয় শহরের গল্প। দেখা যায়, সমির উদ্দীন মাঝি-জোছনার সংসারে নেমে আসে ঘোর বিপদ। বাবু শিকদারেরই বা কী হয়? দুপুরের হলুদ আলোয় বিলে ভাসতে ভাসতে রাতুল-রূপার গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? এভাবেই পুরোটা সময় জুড়ে, হৃদস্পন্দন থামিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াতে হবে পাঠককে। কোমল, স্নিগ্ধ জীবনের গল্প আছে এই উপন্যাসে। আছে অপেক্ষার গল্প, তীব্র যন্ত্রণার গল্প— যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে পুরো একটা জীবন।
Title | : | মেঘজীবনের গল্প |
Author | : | নাহিদ আহসান |
Publisher | : | জ্ঞানকোষ প্রকাশনী |
Edition | : | 1st Edition, 2023 |
Number of Pages | : | 115 |
Country | : | Bangladesh |
Language | : | Bengali |
Reviews
There are no reviews yet